ইসলামী বিপ্লবের পথ- সাইয়েদ আবুল আলা মাওদুদী (র:)

ইসলামী বিপ্লবের পথ
সাইয়েদ আবুল আলা মাওদুদী (র:)অনুবাদ: আব্দুস শহীদ নাসিম

ভূমিকা:
ইসলামী সমাজ প্রতিষ্ঠার বুলি আমরা প্রতিনিয়ত শুনে থাকি। কিন্তু উহার স্বরুপ এবং প্রতিষ্ঠার পন্থা সম্পর্কে আমাদের সঠিক ধারনার অভাব। ইসলামী রাষ্ট্র সম্পর্কে সকল সন্দেহ বিদূরিত করতে ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠারকল্পনাকে বাস্তবে রুপান্তরিত করতে হলেইসলামের স্বকীয় আদর্শে ব্যক্তির আত্নগঠন ও সমাজ সত্তার রুপায়ন করতে হবে। ইসলামী হুকুমাত- কিসতারাহ কায়েম জাতি হ্যায় এর বাংলা সংস্করন হল- ইসলামী বিপ্লবের পথ। ১৯৪০ সালের ১২ই সেপ্টেম্বর আলীগড় বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টেচি হলে ইতিহাস ও সংস্কৃতি সংসদেরউদ্যোগে অনুষ্ঠিত সভায় মাওলানা মওদূদীর প্রদত্ত বক্তৃতারই প্রকাশিত রুপ এই বই।
মূল বইকে ৬ টি ভাগে ভাগ করা যায়:
১. রাষ্ট্র ব্যবস্থার স্বাভাবিক বিবর্তন।
২. আদর্শিক রাষ্ট্র।
৩. আল্লাহর সার্বভৌমত্ব এবং মানুষের প্রতিনিধিত্ব ভিত্তিক রাষ্ট্র ।
৪. ইসলামী বিপ্লবের পদ্বতি।
৫. অবাস্তব ধারণা-কল্পনা।
৬. ইসলামী আন্দোলনের সঠিক কর্মনীতি

১. রাষ্ট্র ব্যবস্থার স্বাভাবিক বিবর্তন:
    * রাষ্ট্র ব্যবস্থা তো কোন একটি সমাজের মধ্যকার নৈতিক চরিত্রচিন্তাচেতনামন মানসিকতাসভ্যতা সংস্কৃতি এবং ইতিহাস এতিহ্যগত কার্যকারণের সমন্বিত কর্ম প্রক্রিয়ার ফলশ্রুতিতে সম্পূর্ণ স্বাভাবিক নিয়মে জন্ম লাভ করে।
     * 
আর রাষ্ট্রের প্রকৃতি কি হবে তাও নির্ভর করে সমাজের সেই পরিবেশ ও দৃষ্টিভংগির উপর যার চাপের ফলশ্রুতিতে রাষ্ট্র জন্ম লাভ করে ।
     * 
আমরা যে বিশেষ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে চাইসে প্রকৃতির রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য সে রকম আন্দোলন সৃষ্টি করতে হবে । সে রকম ব্যক্তিগতদলীয় ও সামাজিক চরিত্র প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত নেতৃত্ব এবং সামাজিক কার্যক্রম ও পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে ।
২. আদর্শিক রাষ্ট্র:
ইসলামী রাষ্ট্রের সর্বপ্রথম বৈশিষ্ট্য হল ।
ক. এখানে জাতীয়তাবাদের নাম গন্ধও অনুপস্থিত। এটা হলো IDEOLOGICAL STATE’ যার আদর্শ গ্রহন করে নিলে বংশ গোত্র ও বর্ণ নির্বিশেষে সকলেই সে রাষ্ট্র পরিচালনায় অংশীদার হয়ে যাবে । খৃষ্টবাদ,ফরাসী বিপ্লবকমিউনিজম ইত্যাদি এ আশা ক্ষীণ ভাবে জাগ্রত করলে ও জাতীয়তাবাদের তীর্যক ভাবধারায়সমুদ্রের অতল তলদেশে ডুবিয়ে দিয়েছে।
খ. এ রাষ্ট্রব্যবস্থা গোটা মানবজাতিকে তার আদর্শ গ্রহন করে অজাতীয়তাবাদী বিশ্বজনীন রাষ্ট্র গঠনের আহ্বান জানায়।
গ. বর্তমান বিশ্বে এমন একটি রাষ্ট্রের ধারণা অপরিচিত। তা কেবল অমুসলিমদের কাছেই নয় বরং মুসলমানরা পর্যন্ত এর অনর্তনিহিত ভাবধারা অনুধাবন করতে অক্ষম।
১. ইসলামী রাষ্ট্রই আদর্শভিত্তিক রাষ্ট্র।
২. সংকীর্ন জাতীয়তাবাদ হতে সম্পূর্ন মুক্ত।
৩. অন্যান্য রাষ্ট্রনীতি হতে সম্পূর্ণ পৃথক।
৪. জনগনের অধিকার সুদৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত করা।
৫. যোগ্যতার বলে যে কেউ শাসক হতে পারে।
৬. আদর্শ হবে ইসলাম।
৭. উন্নয়নের প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে।
৮. সার্বভৌমত্ব হবে আল্লাহরপ্রতিনিধিত্ব হবে জনগনের।



৩. আল্লাহর সার্বভৌমত্ব এবং মানুষের প্রতিনিধিত্ব ভিত্তিক রাষ্ট্র:
ইসলামী রাষ্ট্রের দ্বিতীয় বৈশিষ্ট হলতার গোটা অট্টালিকা আল্লাহর সার্বভৌমত্বের উপর প্রতিষ্ঠিত ।
এই রাষ্ট্রের প্রকৃত স্বরূপ হচ্ছেএখানে মানুষ আল্লাহর প্রতিনিধি হিসাবে কাজ করে।
এই খিলাফাত প্রতিষ্ঠার কাজে এমন সব লোকই অংশীদার হবেযারা এই আইন ও বিধানের প্রতি ঈমান আনবে এবং তা অনুসরণ ও কার্যকর করার জন্য প্রস্তুত থাকবে।
সামষ্টিক ভাবে আমাদের সকলকে এবং ব্যক্তিগতভাবে আমাদের প্রত্যেককে এর জন্য মহান আল্লাহর কাছে জবাবদিহি করতে হবে।
ইসলামী রাষ্ট্রের নাগরিকভোটার সেনা প্রধান রাষ্ট্রদূতমন্ত্রীবর্গমোটকথা নিজেদের সমাজ জীবনের প্রতিটি বিভাগপরিচালিকা যন্ত্রের প্রতিটি অংশ সম্পূর্ণ নতুনভাবে নিজস্ব ভিত্তিতে ঢেলে সাজাতে হবে।
এ রাষ্ট্রের পরিচালকদের অন্তরে আল্লাহর ভয় থাকবে।
পৃথিবীর ধনভান্ডার হস্তগত হলেও নিখাদ আমানতদার প্রমানিত হবে।
ক্ষমতা হস্তগত হলে জনগনের কল্যান চিন্তায় যারা বিনিদ্র রজনী কাটাবে।
জনগণ ও তাদের সুতীব্র দায়িত্বানুভূতিপূর্ণ রক্ষণাবেক্ষণাধীনে নিজেদের জানমালইজ্জত আবরুসহ যাবতীয় ব্যাপারে সম্পুর্ণ নিরাপদ ও নিশ্চিন্ত …………..
৪. ইসলামী বিপ্লবের পদ্ধতি:
ক. ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হবার জন্য প্রথমে এমন একটি আন্দোলন প্রয়োজন যে আন্দোলনের মধ্যে ইসলামের প্রাণশক্তির সাথে পূর্ণ সামঞ্জস্যশীল।
খ. এমন একটি শিক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে যা জ্ঞান বিজ্ঞানের প্রতিটি শাখায় এমনসব বিশেষজ্ঞ তৈরী হবে যারা নিজেদের মন মানসিকতা ধ্যানধারনা ও চিন্তা দর্শনের দিক থেকে হবে পূর্ণ মুসলিম। যাদের ইসলামের মূলনীতির ভিত্তিতে বাস্তবধর্মী এক পরিপূর্ণ জীবন ব্যবস্থার নীল নকশা তৈরী করার থাকবে পূর্ণাংগ যোগ্যতা ।
গ. প্রভাবশালী লোকদের আন্দোলনে সমম্পৃক্ত করা

৫. অবাস্তব ধারণা কল্পনা: কিছু লোকের ধারণা।
ক. মুসলমানরা সংগঠিত হলেই তাদের সকল সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। মূলত জাতীয়তাবাদী চিন্তাধারা দিয়ে ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয় না।
খ. মুসলমান একটি বংশগত বা ঐতিহাসিক জাতির ধারণা শুধু সেই জাতিটিরই কেবল উন্নতি সাধন করা এবং একটি জাতীয় রাষ্ট্র ও অর্জিত হতে পারে । কিংবা কমপক্ষে দেশ শাসনে ভাল একটা অংশীদারিত্ব লাভ হতে পারে। কিন্তু ইসলামী বিপ্লব বা রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার দিক দিয়ে এটাকে প্রথম পদক্ষেপ ও বলা যেতে পারে না।

৬. ইসলামী আন্দোলনের সঠিক কর্মণীতি:
   ক) এক আল্লাহর একচ্ছত্র ও সার্বভৌমত্বের ভিত্তিতে মানবজীবনের পরিপূর্ণ ইমারত রচনা করার প্রচেষ্টা ও আন্দোলনকে বৈপ্লবিক দৃষ্টিতে বলা হয় ইসলাম।
     খ) মুহাম্মদুর রাসুলুল্লাহ (সা:) এর অনুসৃত পথেই ইসলামী আন্দোলনের কর্মনীতি পরিচালনা করা। 
ইসলামী বিপ্লবের পথ- সাইয়েদ আবুল আলা মাওদুদী (র:) ইসলামী বিপ্লবের পথ- সাইয়েদ আবুল আলা মাওদুদী (র:) Reviewed by Younus B A Noor on 8:40:00 PM Rating: 5
Powered by Blogger.