কর্মপদ্ধতি

কর্মপদ্ধতি

বাংলাদশ ইসলামী ছাত্রশিবির


         কর্মপদ্ধতি কাকে বলে?
কর্মকে সফল করার জন্য যে পদ্ধতি বা নীতিমালা প্রনয়ন করা হয় তাকে কর্মপদ্ধতি বলে। মানব রচিত মতবাদকে প্রতিষ্ঠা করার জন্য যে নীতিমালা প্রণয়ন করা হয় তাকে মানব রচিত মতবাদ বলে।
বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের কর্মপদ্ধতি যে সকল নীতিমালা দ্বারা কর্মসূচিগুলো পরিচালনা করা হয় তাকে শিবিরের কর্মপদ্ধতি বলে।
          শিবিরের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যঃ আল্লাহর এ জমিন থেকে সকল প্রকার জুলুম ও নির্যাতন মূলোচ্ছেদ করে আল কোরআন ও আল হাদীসের আলোকে ভ্রাতৃত্ব ও ন্যায় সৌধের উপর এক ইসলামী সমাজ গড়ে তোলার মহান লক্ষ্যকে সামনে রেখে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বাংলাদেশ ইসলামী ছাশিবির। চমক লাগানো সাময়িক কোন উদ্দেশ্যে নয়।
          কর্মপদ্ধতির প্রকারভেদঃ
কর্মপদ্ধতিকে তিন ভাগে ভাগ করা যায়।
১. ভূমিকা ২. মূল আলাচনা ৩. পরিশিষ্ট্য
          কর্মপদ্ধতির প্রয়াজনীয়তাঃ
১. শিবিরের কর্মপদ্ধতি ও অন্যান্য কর্মপদ্ধতির পার্থক্য ২. পদ্ধতিগত দিক থেকে পার্থক্য
৩.রাসূল (সা:) এর অনুসৃত পদ্ধতি ৪. যুগে যুগে ইসলামী আন্দালনের ইতিহাস ৫. ইসলামী আন্দালনের কর্মীদের ত্যাগ ও কুরবানী।
           সক্রিয় কর্মীর গুনাবলীঃ ৮ টি
১. মজবুত ঈমান
২. খোদাভীতি
৩. আদর্শের সুস্পষ্ট জ্ঞান
৪. আন্তরিকতা
৫. নিষ্ঠা ৬.কর্মস্পৃহা
৭. চারিত্রিক মাধুর্য্য
৮. কর্মসূচি ও কর্মপদ্বতির যথার্থ অনুধাবন
           কর্মসূচি ও কর্মপদ্ধতি জানার মাধ্যমঃ ৪ টি
১. বার বার অধ্যয়ন
২. চিন্তা গবেষনা ও অধ্যয়ন
৩. কর্মপদ্ধতির সাথে কাজের সম্পর্ক
৪. পুরাতন দায়িত্বশীলদের অভিজ্ঞতা
           কর্মীর বেশিষ্ট্যঃ ৫ টি
১. দাওয়াতী কাজ করা
২. কর্মী সভায় নিয়মিত যোগদান
৩. বায়তুলমাল নিয়মিত এয়ানত দেয়া
৪. ব্যক্তিগত রিপোর্ট রাখা
৫. টেবিল ব্যাংক দেয়া
           শিবিরের কর্মপদ্ধতি ও অন্যান্য কর্মপদ্ধতির মধ্যে পার্থক্যঃ
শিবিরের কর্মপদ্ধতি 
১. কর্মপদ্ধতির দর্শন ইসলাম।
২. শিবির চায় ন্যায় ও যুক্তিসঙ্গভাবে ইসলাম প্রতিষ্ঠা।
৩. কর্মপদ্ধতির ভিত্তি কুরআন ও সুন্নাহ ।
৪. সহজসরল ও বিজ্ঞানসম্মত কর্মপদ্ধতি।
অন্যান্য কর্মপদ্ধতি
১. কর্মপদ্ধতির দর্শন গাইরে ইসলাম।
২.সন্ত্রাসশক্তি ও মিথ্যাচার যে কোন মাধ্যমে তাদের আদর্শ প্রতিষ্ঠা।
৩. বাতিলের ভিত্তি মনগড়া মতবাদ।
৪. সঠিক অনুসিত কোন পদ্ধতি পরিলক্ষিত হয় না।
প্রথম দফা কর্মসূচি
           দাওয়াতঃ তরুন ছাত্র সমাজের কাছে ইসলামের আহবান পৌছে দিয়ে তাদের মাঝে ইসলামী জ্ঞান অর্জন এবং বাস্তব জীবনে ইসলামের পূর্ণ অনুশীলনের দায়িত্বানুভূতি জাগ্রত করা।
           দাওয়াতর দিকঃ ৩ টি
১. ইসলামের ব্যাপক প্রচার
২. ছাত্রদের মাঝে ইসলামী জ্ঞান অর্জেনর দায়িত্বানুভূতি
৩. ইসলামী অনুশাসন মেনে চলার দায়িত্বানুভূতি জাগ্রত করা।
           দাওয়াতর কাজঃ ৭ টি
১. ব্যক্তিগত সাক্ষাৎকার ও সমপ্রীতি স্থাপন
২. সাপ্তাহিক ও মাসিক সাধারণ সভা
৩. সিম্পোজিয়াম ও সেমিনার
৪. চা-চক্র ও বনভোজন
৫. নবাগত সংবর্ধনা
৬. বিতর্ক সভারচনাত্রবং বক্তৃতা প্রতিযাগীতা ও সাধারণ জ্ঞানের আসর
৭. পোষ্টারিংদেয়াল লিখনপরিচিতি ও বিভিন্ন সময় প্রকাশিত সাময়িকী বিতরন।
            টার্গেটকৃত ছাত্রের গুনাবলীঃ ৫ টি
১. মেধাবী ছাত্র
২. বুদ্বিমান ছাত্র
৩. চরিত্রবান
৪. নেতৃত্বের গুনাবলী সম্পন্ন
৫. সমাজে বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রভাবশালী
            ব্যক্তিগত সাক্ষাৎকারের পন্থাসমূহঃ
১.পরিকল্পনাঃ অল্প বা দীর্ঘ সময়ধৈর্য্য ও আন্তরিকতানিয়মিত যোগাযোগ
২.সমপ্রীতি স্থাপনঃ
৩.ক্রমধারা অবলম্বনঃ
    ক) প্রথম সাক্ষাতে মূল দাওয়াত না পৌছানা
    খ) আস্থা ও বিশ্বাস স্থাপন
    গ) যাবতীয় ভুল ধারনার অপনোধন
    ঘ) ইসলামের সুমহান পরিচয় তুলে ধরা
    ঙ) ইসলামী অনুশাসনের প্রতি আকর্ষন সৃষ্টি করা
    চ) সাংগঠনিক জীবনের পরিচয় তুলে  ধরা
    ছ) রাসূল (সা:) ত্রর বিপ্লবী জীবন
    জ) সাহাবায়ে কেরামের সংগ্রামী জীবন
       যোগাযোগকারীর বেশিষ্ট্যঃ
১. কম কথা বলা
২. অত্যধিক ধৈর্য্যের পরিচয় দেয়া
৩. বেশী কথার পরিবর্তে চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য দিয়ে আকর্ষন সৃষ্টি করা
৪. ইসলাম সম্পর্কে সঠিক ও স্পষ্ট ধারনা রাখা
৫. কোন প্রশ্নের জবাব দিতে না পারলে গোজামিলের আশ্রয় না নেয়া
৬. সাক্ষাৎকৃত ব্যক্তির মনমানষিকতার দিকে লক্ষ্য রাখা
৭. যোগাযোগকৃত ব্যক্তির রোগ দূর করার জন্য একজন অভিজ্ঞ চিকিৎসকের ভূমিকা পালন করা
৮. দুর্বলতার সমালোচনা না করা
৯. সৎ গুনাবলী বিকাশে সহযোগিতা করা
১০. ব্যবহারে অমায়িক হওয়া
১১ .সুখে-দু:খে অংশীদার হওয়া
১২. মনকে অহেতুক ধারনা থেকে দূরে রাখা
১৩. সম্পর্ক বৃদ্বির জন্য একসাথে ভ্রমন ও নাস্তা করানিজ বাসায় নিয়ে আসাতার বাসায় যাওয়া ও উপহার সামগ্রী প্রদান।
          ক্রমান্বয়ে কর্মী পর্যায়ে নিয়ে আসাঃ
১. সংগঠনের বিভিন্ন অনুষ্ঠানের প্রতি প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে আকর্ষন সৃষ্টি করা
২. সাধারন সভাচা-চক্র ও বনভাজনে শামিল হতে হবে
৩. ছাত্রদের জ্ঞানবুদ্ধিআন্তরিকতামানষিকতা ও ঈমানের দৃঢ়তা লক্ষ্য করে পরিকল্পিতভাবে বই পড়াতে হবে
৪. বিভিন্ন ইবাদতের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষন করতে হবে
৫. সময় সময় মনমানষিকতা বুঝে তাকে ছোট ছোট কাজ দিতে হবে।
 দ্বিতীয় দফা কর্মসূচি
সংগঠনঃ যে সব ছাত্র ইসলামী জীবন বিধান প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে অংশ নিতে প্রস্তুত তাদেরকে সংগঠনের অধীনে সংগবদ্ধ করা।
দিতীয় দফার কাজঃ ২ টি
১. মানগত : কর্মীসাথীসদস্য
২. কর্মী বেঠকসাথী বৈঠকসদস বৈঠককর্মী যোগাযোগপরিকল্পনাবায়তুলমানসফরদায়িত্বশীল নির্বাচন।
কর্মীঃ যে সমর্থক সক্রিয়ভাবে দাওয়াতী কাজ করেবায়তুলমাল এয়ানত দেনকর্মী সভায় নিয়মিত যোগদান করেনব্যক্তিগত রিপার্ট রাখেন তাকে আমরা কর্মী বলে থাকি।
কর্মীর কাজঃ ৮ টি
১. কুরআনহাদীস নিয়মিত বুঝে পড়ার চেষ্টা করা
২. নিয়মিত ইসলামী সাহিত্য পড়া
৩. ইসলামের প্রাথমিক দাবীসমূহ মেনে চলার চেষ্ট করা
৪. বায়তুলমাল নিয়মিত এয়ানত দেয়া
৫. কর্মী সভাসাধারন সভা প্রভৃতি প্রোগ্রামে যোগদান
৬. সংগঠন কতৃক অর্পিত দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করা
৭. নিয়মিত রিপোর্ট রাখা ও দেখানো
৮. অপরের কাছে সংগঠনের দাওয়াত পৌছানো
সাথী হওয়ার শর্তঃ ৪ টি
১. সংগঠনের লক্ষ্য উদ্দেশ্যের সাথে একমত পোষন করা
২. সংগঠনের কর্মসূচি ও কর্মপদ্বতির সাথে একমত হওয়া
৩. ইসলামের প্রাথমিক দায়িতসমূহ পালন করা
৪. সংগঠনের সামগ্রিক তৎপরতায় পূর্ণভাবে সহায়তা করার প্রতিশ্রুতি দেয়া
কর্মী যোগাযোগের পদ্বতিঃ ৭ টি
১. পরিকল্পনা গ্রহন
২. সময় ও স্থান নির্ধারন
৩. ঐকান্তিকতা
৪. ব্যক্তিগত ও পারিবারিক সমস্যা আলোচনা
৫. সাংগঠনিক আলোচনা
৬. সার্বিক আন্দালনের আলোচনা
৭. সালাম ও দোয়া বিনিময়
      পরিকল্পনার বিষয়সমূহঃ ৬ টি
১. জনশক্তির শ্রেণী বিন্যাস
২. কর্মীর মান
৩. কাজের পরিধি ও পরিসংখ্যানমূলক তথ্য
৪. অর্থেনতিক অবস্থা
৫. পারিবারিক অবস্থা
৬. বিরাধী শক্তির তৎপরতা
রিপোটিং: পরিকল্পনার মেয়াদ উত্তীর্ন হওয়ার পর কাজের সুষ্ঠু পর্যালোচনার জন্যে নিয়মিত রিপোটিং প্রণয়ন অপরিহার্য। রিপোর্টের উপর সামষ্টিক পর্যালোচনা বাঞ্ছনীয়। অধ:সত্মন সংগঠনগুলো নিয়মিতভাবে উধর্্বতন সংগঠনে রিপোটিং প্রেরন করবে।
 তৃতীয় দফা কর্মসূচি
প্রশিক্ষনঃ এই সংগঠনের অধীনে সংঘবদ্ধ ছাত্রদেরকে ইসলামী জ্ঞান প্রদান এবং আদর্শ চরিত্রবানরুপে গড়ে তুলে জাহেলিয়াতের সমস্ত চ্যালেঞ্জ্যের মোকাবিলায় ইসলামের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমান করার যোগ্যতাসম্পূর্ণ কর্মী হিসেবে গড়ারকার্যকরী ব্যবস্থা করা।
এ দফার কাজঃ ১৩ টি
১. পাঠাগার প্রতিষ্ঠা করা
২. ইসলামী সাহিত্য পাঠ ও বিতরন
৩. পাঠচক্রআলাচনা চক্রসামষ্ঠিক অধ্যয়ন ইত্যাদি
৪. শিক্ষাশিবির ও শিক্ষাবৈঠক
৫. সপীকারস ফোরাম
৬. লেখক শিবির
৭. শব্বেদারী
৮. সামষ্টিক ভোজ
৯. ব্যক্তিগত রিপোর্ট সংরক্ষন
১০. দোয়া ও নফল ইবাদত
১১. এহ্তেসাব ও গঠনমূলক সমালোচনা
১২. আত্নসমালোচনা
১৩. কুরআন তালীম
আত্নসমালোচনার পদ্ধতি: ৭ টি
১. সময় নির্বাচনঃ ফজরঈশা ও ঘুমানোর সময়।
২. আল্লাহকে হাজির নাজির জানা।
৩. সারা দিনের কর্মবস্ততা স্মরন করা ভালো কাজের শুকরিয়াখারাপ কাজের জন্য তওবা করা।
৪. আদায়কৃত ফরজ ওয়াজিব আন্তরিকতার সহিত পালন করা হয়েছে কিনা চিন্তা করা।
৫. সাংগঠনিক সময় সামর্থ অনুসারে দেওয়া হয়েছে কিনা চিন্তা করা।
৬. ব্যবহারিক জীবন সমপর্কে চিন্তা করা।
৭. আল্লাহর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করা।
তওবার নিয়মঃ ৪ টি
১. ঐকান্তিকতার সাথে নিজ ভুলের স্বীকার করা।
২. ভুলের জন্য আল্লাহর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করা।
৩. দ্বিতীয়বার ভুল না করার জন্য ওয়াদা করা।
৪. নামাজ রোজা বা কুরবানীর মাধ্যমে কাফফারা দেওয়া।
 চতুর্থ দফা কর্মসূচি
ইসলামী শিক্ষা আন্দোলন ও ছাত্রসমাজঃ আদর্শ নাগরিক তৈরীর উদ্দেশ্যে ইসলামী মূল্যবাধের ভিত্তিতে শিক্ষা ব্যবস্থার পরিবর্তন সাধনের দাবীতে সংগ্রাম ত্রবং ছাত্র সমাজের প্রকৃত সমস্যা সমাধানের সংগ্রামে নেতৃত্বপ্রদান।
ইসলামী শিক্ষা প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম এর কাজসমূহ: আমাদের কর্মীদেরকে প্রথমত জেনে নিতে হবে (ক) ইসলামী শিক্ষা ব্যবস্থা বলতে কি বুঝায় (খ) ইসলামী শিক্ষা ব্যবস্থার বৈশিষ্ট্য কি কি (গ) ইসলামী শিক্ষা ব্যবস্থা কিভাবে প্রবর্তন করা যায় (ঘ) বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থার দোষ ক্রটি কি কি (ঙ) বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থার মৌলিক গলদ কোথায় ইত্যাদি।
এ দফার দুইটি দিকঃ
১.ব্যক্তিগত: লজিংস্টাইপেন্ডলেডিং লাইব্রেরীফ্রি কোচিংবিনামূল্যে প্রশ্নপত্র বিলি
২.সামষ্টিক:
ক) কারণ নির্ণয়
খ) স্মারক লিপি প্রদান
গ) আলাপ আলোচনা
ঘ) পোষ্টারিং
ঙ) পত্রিকায় লিখন
চ) প্রতিবাদ সভা
ছ) নিবদ্ধ প্রস্তাব গ্রহন
জ) নিয়মতান্তিক আন্দোলন করা
ঝ) ধর্মঘট
 পঞ্চম দফা কর্মসূচি
ইসলামী সমাজ বিনির্মানঃ অর্থনৈতিক শোষনরাজনেতিক নিপীড়ন ত্রবং সাংস্কৃতিক গোলামী হতে মনবতার মুক্তির জন্য ইসলামী বিপ্লব সাধনে সর্বাত্বক প্রচেষ্টা চালানো।
        প্রথমতক্যারিয়ার সৃষ্টিনেতৃত্ব সৃষ্টিকর্মী সৃষ্টিজ্ঞান অর্জর্ন
        দ্বিতীয়ত: সহযোগিতাপরিবেশ
পরিবেশ সৃষ্টি ও চাপ: চারিত্রিক মাধুয্য দিয়ে জাতীয় জীবনে একটি পবিত্র পরিবেশ সৃষ্টির তৎপরতা চালাতে হবে। এ তৎপরতা যখন উল্লেখযোগ্য পরিমান ছাত্রদেরকে সংশ্লিষ্ট করতে পারবে তখন সমাজ ও জাতীয়জীবনে তা একটি শক্তি রুপে আত্নপ্রকাশ করবে। আর এহেন চারিত্রিক শক্তি দিয়ে আমরা কর্তৃপক্ষের উপর চাপ সৃষ্টি করতে পারবো।
কর্মপদ্ধতি কর্মপদ্ধতি Reviewed by Younus B A Noor on 8:22:00 PM Rating: 5
Powered by Blogger.